Sunrise At: 05:28 AM

Sunset At: 06:40 PM

icon

Our Latest News

img
Shab-e-Barat brings the promise of liberation

শব ফারসি শব্দ, অর্থ রাত। বারাআত শব্দটি আরবি, অর্থ মুক্তি। শবে বারাআত হলো মুক্তির রজনী। হিজরি অষ্টম মাস শাবানের চৌদ্দ তারিখ রাতে মহান আল্লাহতায়ালা অসংখ্য মানুষকে মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এ কারণে এই রাতকে শবেবরাত বা মুক্তির রজনী বলা হয়। আরবিতে এ রাতকে ‘লায়লাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়।
বান্দা যত বড় গুনাহই করুক না কেন, খাঁটি দিলে আল্লাহর কাছে তওবা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন। ক্ষমার জন্য তিনি কোনো সময় বা দিনকে নির্দিষ্ট করেননি। তবে কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু সময় ও দিনের কথা উল্লেখ হয়েছে, যার ফজিলত অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে অন্যতম শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটি। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম,  হে আল্লাহর রাসুল, আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবিজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবিজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮২)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তুমি কি জানো, অর্ধ শাবানের রাতের কার্যক্রম কী? আয়েশা (রা.) বললেন, না, হে আল্লাহর রাসুল। নবি (সা.) বললেন, এ বছর যতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং মারা যাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতেই মানুষের আমল পৌঁছানো হয় এবং এ রাতেই তাদের রিজিক অবতীর্ণ হয়।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ১৩০৫)
আতা ইবনে ইয়াসার (রহ.) থেকে বর্ণিত, ‘শাবানের ১৫তম রাতে মৃতদের তালিকা (মৃত্যুর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতার কাছে) দেওয়া হয়। এমনকি কোনো লোক সফরে বের হয়, অথচ তাকে জীবিতদের তালিকা থেকে মৃতদের তালিকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। কেউ বিয়ে করে অথচ তাকে জীবিতদের তালিকা থেকে মৃতদের তালিকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, ৭৯২৫)
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমি নবি (সা.)-কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন, হে আয়েশা, তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়েশা (রা.) বলেন, তা নয়; বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোনো স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চেয়েও অধিকসংখ্যক মানুষের গুনাহ মাফ করেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৬৬৫)
আলি ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত তোমাদের সামনে আসে, তখন তোমরা নামাজ আদায় করো এবং পরের দিনে রোজা রাখো। আল্লাহতায়ালা এ রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। এর পর তিনি এই বলে ডাকতে থাকেন—তোমাদের মধ্যে আছে কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তার বিপদ দূর করে দেব। ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৮)
প্রসিদ্ধ তাবেয়ি আতা ইবনে ইয়াসার (রহ.) বলেন, ‘শাবান মাসের পনেরো তারিখের রাতের চেয়ে উত্তম কোনো রাত নেই।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, ১৫১)। শবেবরাতের রাতে গুরুত্বের সঙ্গে কয়েকটি আমল করা যেতে পারে। যেমন- নফল নামাজ আদায়, তওবা করা, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করা। পরদিন রোজা রাখা। শবেবরাতে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা ও হাদিসে বর্ণিত আমল করব। পাশাপাশি প্রচলিত ভুল কাজগুলো বর্জন করব।